পেরিকরোনাইটিস বা দাঁতের পিছনে মাংস বৃদ্ধি

ক’দিন ধরে লাবণী কলেজে যাচ্ছে না। তার বান্ধবীরা বাসায় ফোন করে জানতে পারল তার দাঁতে ব্যথা হচ্ছে এবং মুখ ফুলে খাওয়া-দাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। মুখ খুলতে পারছে না।

আমাদের দেশে সাধারণত ১৮-২৫ বছরের যুবক-যুবতীরা এ জাতীয় সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। আক্কেল দাঁতের এই সমস্যাকে পেরিকরোনাইটিস বলা হয়। সাধারণত দাঁত গজানোর সময় বা আংশিক গজানো অবস্থায় দাঁতের উপরস্থ বা পার্শ্বস্থ টিস্যুর সংক্রমিত অংশ পেরিকরোনাইটিস নামে পরিচিত।

এ রোগের লক্ষণ

১. আপনার বয়স যদি হয় ১৮-৩০ বছর।
২. কয়েকদিন ধরে নিচের চোয়ালের সর্বশেষ প্রান্তে চাপা চাপা ব্যথা অনুভব করেন।
৩. খাবার সময় বা দাঁত ব্রাশ করার সময় ওই স্থানে ব্যথা অনুভব হচ্ছে।
৪. মুখে দুর্গন্ধ হচ্ছে।
৫. ধীরে ধীরে মুখ ফুলে যাচ্ছে এবং সামান্য চাপ লাগলে পুঁজ বেরুচ্ছে।
৬. হা করতে কষ্ট হচ্ছে, কোনো কিছু চিবিয়ে খেতে পারছেন না। শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, দুর্বল অনুভব করছেন।

চিকিৎসা

এ ক্ষেত্রে ওই দাঁতের এক্স-রে করতে হবে। এতে যদি দেখা যায় দাঁতের গতি ভালো তাহলে দাঁতের উপরস্থ অপারকুলাম টিস্যুগুলো ছোট একটি অপারেশনের মাধ্যমে অপসারণ করলে দাঁতটি স্বাভাবিক গতিতে গজাতে পারবে। কিন্তু যদি দেখা যায়, দাঁতটির অবস্থান স্বাভাবিক নয় বা হাড়ের মধ্যে আছে; টিস্যু অপসারণ করলেও স্বাভাবিকভাবে দাঁতটি গজাবে না সে ক্ষেত্রে দাঁত তুলে ফেলাই উত্তম। অনেক সময় দেখা যায় ক্যারিজ হয়ে দাঁতের উপরের অংশ একবারেই নষ্ট হয়ে গেছে, সে ক্ষেত্রে আক্রান্ত দাঁতটি তুলে ফেলাই ভালো, তা না হলে ভবিষ্যতে পাশের ভালো দাঁতটি আক্রান্ত হতে পারে।

অনেক সময় দেখা যায় দাঁতের অবস্থান ভালো এবং অপারকুলাম টিস্যু কিছুদিন পর এমনিতে মিলিয়ে যাবে সে ক্ষেত্রে মুখ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলেই চলবে, কোনো অপারেশনের দরকার নেই।

এ রোগের জটিলতা :

- পেরিকরোনাইটিস বারবার হতে পারে।
- চিকিৎসায় দেরি হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে মুখমণ্ডলের অন্যান্য দিক ও গলার দিকও আক্রান্ত হতে পারে, যা সেলুলাইটিস নামে পরিচিত।
- অসটিওমাইলাইটিস হতে পারে।
- আক্কেল দাঁতের সামনের দাঁতটি ধীরে ধীরে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
উপরোক্ত লক্ষণগুলো আংশিক দেখা দিলেই আপনার উচিত হবে অভিজ্ঞ মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া। তবে এর আগে ঘরে বসেই আপনি পরিচর্যার ভার কিছুটা নিতে পারেন। যেমন-
- এ অবস্থায় প্রতিবার খাবার পর হালকা লবণ-গরম পানি দেয় কুলি করতে পারেন।
- কিছুটা ব্যথা থাকলেও একটু কষ্ট করে দাঁত ব্রাশ করে মুখ জীবাণুমুক্ত রাখার চেষ্টা করতে পারেন।
- এ ছাড়াও ভালো কোনো মাউথওয়াশ দিয়ে কুলি করতে পারেন।

এ রোগের কারণ :

- আক্কেল দাঁত ওঠার সময় দাঁতের উপরস্থ টিস্যুগুলো স্বাভাবিক নিয়মে ক্ষয়প্রাপ্ত না হলে বিপরীতে অবস্থিত দাঁতের চাপে উত্তোলিত ওই দাঁতের উপরস্থ টিস্যুগুলোর উপর বারবার কামড় পড়লে অথবা আঘাত লাগলে।

- অনেক সময় দেখা যায়, আক্কেল দাঁতটি উঠতে পারছে না কিন্তু তার উপর যে টিস্যুদ্বারা দাঁতটি ঢেকে রয়েছে সেখানে খাবার জমে। যখন তা পরিষ্কার করা হয় না ফলে তা পচন ধরে ইনফেকশন হয়ে যায় এবং তখন প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।

পেরিকরোনাইটিস দাঁতের বৃদ্ধির সময় হলে তাই এর জটিলতা এড়াতে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া একে অবহেলা করবেন না। তবে অব্যশই অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনের সহায়তায় চিকিৎসা করাই উত্তম। বছরে অন্তত দু’বার আপনার ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নিন।

Comments